Mpox কি? এম পক্স কিভাবে ছড়ায়? প্রতিকার করার সহজ উপায়
Mpox কি? এম পক্স কিভাবে ছড়ায়? প্রতিকার করার সহজ উপায়। Mpox বা মনকিপক্স হলো একটি বিরল ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা মূলত পশুর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এই রোগটি বিশেষ করে বানর এবং ইঁদুরের মতো বন্য প্রাণীদের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।
যদিও এটি একসময় শুধুমাত্র আফ্রিকার কিছু অংশে সীমাবদ্ধ ছিল, বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এম পক্সের লক্ষণগুলো সাধারণত মৃদু হলেও, কখনও কখনও এটি গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। নিচে এম পক্সের বিস্তারিত তথ্য এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
এম পক্স কী?
এম পক্স একটি পক্সভাইরাস পরিবারের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। এটি Orthopoxvirus গণের অন্তর্গত একটি ভাইরাস। এই রোগটি সাধারণত পশু থেকে মানুষে ছড়ায় এবং মানুষের মধ্যে সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট ফুসকুড়ি এবং ফ্লু-সদৃশ লক্ষণ দেখা দেয়। এম পক্সের প্রাথমিক সংক্রমণ সাধারণত শরীরের যে কোনো অংশে ফুসকুড়ি বা ফোস্কা দেখা দিয়ে শুরু হয়, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে এবং Mpox কি? সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।
এম পক্সের লক্ষণসমূহ
এম পক্সের লক্ষণগুলো সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্লু-সদৃশ হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো:
- জ্বর: সংক্রমণের পর প্রথম লক্ষণ হিসেবে উচ্চ জ্বর দেখা দেয়।
- মাথাব্যথা: জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
- শরীরে ব্যথা: পেশী এবং জয়েন্টের ব্যথা হতে পারে।
- লিম্ফ নোড ফোলা: গলার লিম্ফ নোড ফোলা একটি সাধারণ লক্ষণ।
- শরীরে ফুসকুড়ি: প্রথমে মুখের চারপাশে, পরে সারা শরীরে ফুসকুড়ি বা ফোস্কা দেখা দেয়।
এম পক্স কিভাবে ছড়ায়?
এম পক্স মূলত প্রাণী থেকে মানুষে এবং মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। এর সংক্রমণের প্রধান উপায়গুলো হলো:
১. প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণ:
এম পক্স প্রধানত বন্য প্রাণীদের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। সংক্রমিত প্রাণীর রক্ত, শরীরের তরল, বা চামড়ার ক্ষত দ্বারা এটি ছড়ায়। Mpox কি?
২. মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ:
মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটতে পারে সংক্রমিত ব্যক্তির ফুসকুড়ির তরল, শ্বাসনালী থেকে নির্গত ড্রপলেট, বা অন্যান্য শরীরের তরল মাধ্যমে। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা কাপড়, বিছানা, এবং অন্যান্য সামগ্রীও সংক্রমণ ছড়ানোর মাধ্যম হতে পারে।
এম পক্স প্রতিরোধের উপায়
এম পক্স প্রতিরোধের জন্য কয়েকটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
১. সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা:
সংক্রমিত ব্যক্তির ফুসকুড়ি, শরীরের তরল, এবং ব্যবহার করা সামগ্রী থেকে দূরে থাকা উচিত।
২. সঠিক ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
বারবার হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, এবং নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। Mpox কি?
৩. সুরক্ষামূলক পোশাক পরা:
সংক্রমিত ব্যক্তির যত্ন নেওয়ার সময় গ্লাভস, মাস্ক, এবং অন্যান্য সুরক্ষামূলক পোশাক ব্যবহার করা উচিত।
৪. টিকাদান:
যদিও এম পক্সের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টিকা নেই, তবে কিছু পক্সভাইরাস এর বিরুদ্ধে প্রচলিত টিকা এম পক্স প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
এম পক্সের চিকিৎসা
এম পক্সের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত রোগীর শরীর নিজেই সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি এবং অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।
গুরুতর ক্ষেত্রে কী করবেন?
গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হতে পারে।
এম পক্স প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি
এম পক্স প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো এবং সরকারগুলোকে এ বিষয়ে কার্যকর প্রচারণা চালাতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে জনসাধারণকে এ রোগের লক্ষণ, সংক্রমণ, এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানানো উচিত।
এম পক্সের ইতিহাস
এম পক্স প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৫৮ সালে, যখন ডেনমার্কের একটি গবেষণাগারে গবেষণারত বানরদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর পরেই এই ভাইরাসটির নামকরণ করা হয় “মনকিপক্স”। যদিও প্রথমে এটি শুধুমাত্র পশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, ১৯৭০ সালে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে প্রথমবারের মতো একজন মানুষের মধ্যে এম পক্সের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এরপর থেকে এই রোগটি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে sporadic আকারে দেখা যেতে থাকে।
এম পক্সের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য
এম পক্স ভাইরাসটি ডিএনএ ভাইরাস এবং এটি পক্সভাইরাস পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই ভাইরাসটি অন্যান্য পক্সভাইরাস, যেমন স্মলপক্স ভাইরাসের সাথে অনেকটাই মিল রয়েছে। এম পক্সের দুটি প্রধান strain রয়েছে: Congo Basin strain এবং West African strain। কঙ্গো বেসিন স্ট্রেইনটি তুলনামূলকভাবে বেশি মারাত্মক এবং মৃত্যুহারও বেশি। অন্যদিকে, পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনটি কম মারাত্মক এবং এর সংক্রমণ ক্ষমতাও কম।
এম পক্স সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য
এম পক্সের সংক্রমণ ক্ষমতা এবং উপসর্গের তীব্রতা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। শিশু এবং ইমিউন সিস্টেম দুর্বল ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের মারাত্মকতা বেশি হতে পারে। সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার আগে সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে, যা incubation period নামে পরিচিত। এই সময়ের পর হঠাৎ করেই ফ্লু-সদৃশ লক্ষণ এবং ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
এম পক্সের বৈশ্বিক প্রভাব
এম পক্স একসময় শুধুমাত্র আফ্রিকায় সীমাবদ্ধ ছিল, তবে বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এম পক্সের সংক্রমণ দেখা যায়। এই প্রাদুর্ভাবের ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করতে হয়েছে।
এম পক্স ও কোভিড-১৯ এর মধ্যে পার্থক্য
কোভিড-১৯ এবং এম পক্স উভয়ই ভাইরাসজনিত রোগ, তবে এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। কোভিড-১৯ হল একটি RNA ভাইরাস, যেখানে এম পক্স হল একটি DNA ভাইরাস। কোভিড-১৯ মূলত শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায়, যেখানে এম পক্স সংক্রমিত ব্যক্তির শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়া, কোভিড-১৯ এর তুলনায় এম পক্সের সংক্রমণ এবং মৃত্যু হার অনেক কম।
এম পক্স সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এম পক্স প্রতিরোধে ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্তরে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
- প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণ প্রতিরোধ: বন্য প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, বিশেষ করে তারা যদি অসুস্থ থাকে বা তাদের শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
- সতর্কতা: সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকা।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: যে কোনো ফুসকুড়ি বা ফ্লু-সদৃশ লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- কমিউনিটি সচেতনতা: সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং প্রতিরোধমূলক টিকাদানের প্রচার।
এম পক্সের ভবিষ্যত ঝুঁকি এবং প্রস্তুতি
বিশ্বব্যাপী পরিবহন এবং ভ্রমণের ফলে এম পক্সের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন রোগ প্রতিরোধী পদ্ধতি এবং প্রতিষেধক টিকা উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।
এম পক্স একটি গুরুতর ভাইরাসজনিত সংক্রমণ হলেও, সঠিকভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ এড়ানো, এবং সঠিক চিকিৎসা প্রয়োগ করে এই সংক্রমণ থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করা যায়।
এম পক্স সাধারণত মৃদু লক্ষণ সৃষ্টি করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে শিশু, বৃদ্ধ এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
হ্যাঁ, এম পক্স মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তির ফুসকুড়ির তরল, শ্বাসের ড্রপলেট, এবং অন্যান্য শরীরের তরল মাধ্যমে এটি ছড়ায়।
এম পক্সের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টিকা নেই, তবে স্মলপক্সের টিকা এম পক্স প্রতিরোধে কিছুটা কার্যকর হতে পারে।
যদি এম পক্সের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকা উচিত।
এম পক্স প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, এবং সুরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এম পক্স এবং স্মলপক্স উভয়ই পক্সভাইরাস পরিবারের ভাইরাসজনিত রোগ। তবে স্মলপক্স বেশি মারাত্মক এবং ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কর্তৃক এটি নির্মূল করা হয়েছে, যেখানে এম পক্স এখনো sporadicভাবে দেখা যায়।
এম পক্স সনাক্ত করার জন্য রক্ত পরীক্ষা, ফুসকুড়ির নমুনা পরীক্ষা, এবং পিসিআর (PCR) টেস্ট ব্যবহার করা হয়।
এম পক্সের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা, যেমন জ্বর নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।
এম পক্সের ইনকিউবেশন পিরিয়ড সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিন, তবে এটি ৫ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
এম পক্স মূলত আফ্রিকার দেশগুলোতে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে কঙ্গো এবং নাইজেরিয়ায়। তবে সম্প্রতি এটি অন্যান্য দেশেও sporadicভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।